রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:
”অসৎ হতে সত্যে নিয়ে যাও, অন্ধকার হতে জ্যোতিতে নিয়ে যাও, মৃত্যু হতে অমরত্বে নিয়ে যাও- সর্বত্র যেন ছড়িয়ে পড়ুক শান্তির বার্তা।’
শিশিরঝরা হেমন্তের ঘনঘোর অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলির আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে চারদিক। আজ রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামাপূজা ও দীপাবলি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে ভক্তের জীবনে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামা বা মা কালির। বেশির ভাগ দেব-দেবীর পূজা দিনে হলেও কার্তিকী অমাবস্যায় রাতে হয় শ্যামাপূজা। পঞ্জিকামতে, আজ সন্ধ্যায় দীপাবলি ও মঙ্গল শিখা প্রজ্বালন এবং দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত হবে শ্যামাপূজা।
এই দিনে সনাতন ধর্মালম্বীরা ঘরে ঘরে ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালেন। দীপাবলির অনুষ্ঠানে সারি-সারি প্রদীপের আলোতে স্বর্গের দেবতাকে গৃহে বরণ করে নেওয়া হয়। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। আজকের এ দিনে, মৃত স্বজনদের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ জ্বালিয়ে পানিতে ভাসায় অনেকেই। রাতে দেবীর পূজার পাশাপাশি অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, আরতি, ধর্মীয় সংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়ে থাকে।
শ্যামাপূজা উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোনা জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পূজামণ্ডপে শ্যামাপূজার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা ধর্মীয় উৎসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মন্ডপে মৃন্মময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী- কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামে শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বারহাট্টা গরুহাট্টা এসো পূজা করি সংঘের প্রতিমা শিল্পী সুবল চন্দ্র পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। এবার আমি নতুন আঙ্গিকে (দেবতা ও অসুরদের সমুদ্রমন্থন) কারুকার্যে প্রতিমা তৈরি করেছি। বরাবরের তুলনায় এবার দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় শিল্পীদের কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলার ১০টি উপজেলার সব মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে। এরই মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বারহাট্টা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমার সাহা জানান, বারহাট্টা উপজেলায় এবার সার্বজনীন ১৮টি ও ব্যক্তিগত ১২টি সহ সর্বমোট ৩০টি পূজা মণ্ডপে শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি প্রতি বছরের মতো এ বছরও হিন্দু-হিন্দু-মুসলিম সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। নেত্রকোনা জেলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হবে শ্যামাপূজা এমনটাই আশা নেত্রকোনা জেলাবাসীর। পূজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, শ্যামাপূজারনিরাপত্তা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো নির্দেশনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষেরা যেন সুন্দরভাবে তাদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিতে পারে। পূজামণ্ডপে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পূজার দিনগুলোতে জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন, নেত্রকোনা পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান। পূজার সময় পৌরসভার কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেই নেত্রকোনা পৌরসভার ইমার্জেন্সি রেসপনস টিম দ্রুত মাঠে নামবে।